মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে হাসপাতাল। আর সেই হাসপাতালেই যদি ভুল চিকিৎসা দেয়া হয় তাহলে নিশ্চিত রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটবে। ঠিক এমনি এক ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের খানসামা ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে।

জানা যায়, এক প্রসূতি মায়ের প্রসব বেদনা উঠলে ওই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪ ঘটিকায়। রাত ১০ ঘটিকায় অনেক বেশি ব্যাথা উঠলে রোগীর পরিবারের লোকজন বার বার বলেন, আমাদেরকে রিলিজ দেন আমরা অন্যত্র নিয়ে যাব। নার্স বলেন সমস্যা নাই এখানেই ডেলিভারি করা যাবে। এরপর একটি ইনজেকশন পুশ করা হয় ঐ প্রসূতি মহিলাকে। আনুমানিক রাত ১ টায় ভূমিষ্ঠ হয় নবজাতক। কিছুক্ষণ পর নবজাতক কালো হওয়া শুরু হয় এবং পরে ভূমিষ্ঠ হওয়া ঐ নবজাতকের মৃত্যু ঘটে।

 

পরিবারের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসার কারনে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে নবজাতকটির মৃত্যু হয়।

 

এ ব্যাপারে প্রসূতির বড় বোন বলেন, হাসপাতালের নার্স আমাকে জানান,প্রসূতির জরায়ু নরম আছে নরমাল ডেলিভারি হবে। কিন্তু আমি বলি আমার বোনের বয়স বেশি, আমরা এত রিস্ক নিতে চাই না। যদি না পারেন তাহলে ছেড়ে দেন। আমরা ডাক্তার চাইছি কিন্তু নার্স বলেন আমরাই পারবো।

রাত সাড়ে দশটায় ডেলিভারি রুমে ঢুকানো হয়। আমাদের দুই বোনকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ওই রুমে। মাত্র এক নার্স ও এক আয়া দায়িত্বে থাকেন। কিছুক্ষণ পর পর ডেলিভারি রুমে বাহির করে আবার ঢুকানো হয়। আমরা তারপরও বলি যে, আমাদেরকে ছেড়ে দেন আমরা এত রিস্ক নিতে চাই না। তারপরও নার্স বলে আমরাই পারবো। আমার বোন প্রসব ব্যথাতে অনেক চিৎকার করতে থাকে। এরপর তারা একটি ইনজেকশন দেয়। এই ইনজেকশন দেওয়ার পরে পরেই ব্যথা আরো বাড়তে থাকে। রাত একটার দিকে বলে আল্লাহ আল্লাহ কর বাচ্চা হয়ে যাবে। আমরা সবাই আল্লাহ আল্লাহ করতেই থাকি এরপর বাচ্চা হয়ে গেল। আমরা দেখি বাচ্চার মুখে কি যেন পাইপ দিয়ে হাওয়া দেয়। তারপর পেটে ডলাডলি করতে থাকে। আমার বোন তারপর বুঝতে পারে যে আমার ছেলে হয়েছে। এবং সে কালো হয়ে যাচ্ছে। তারপর নার্স বললো গাড়ি ঠিক করেন দিনাজপুর নিয়ে যাইতে হবে। কিছুক্ষণ পর বলে যে তোমাদের মরা বাচ্চা বাইর হইছে। আমি দেখছিলাম বাচ্চাটি জীবিত ছিল আর পেটটা শুধু ধুঁক ধুঁক করছিল। আমার অভিযোগ হইলো বাচ্চাটিকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা সঠিক বিচার চাই, আমার বোনের অনেক বড় ক্ষতি করছে নার্সরা। আমি চাই এই নার্স যেন দিনাজপুর জেলায় না থাকে।

এ ছাড়াও জানা যায়, এই হাসপাতালে শুরু থেকেই কোন ডাক্তার ছিল না। একজন নার্স ও একজন আয়া দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে।

তবে হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলেন, প্রসবের আগেই শিশু মারা যায়। আমরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা এই নার্সকে বদলি করলাম। কোথায় বদলি করানো হল এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আজ থেকে এই হাসপাতালে প্রসূতি মহিলাদের চেক আপ করানো হবে আপাততঃ ডেলিভারি সেবা দেওয়া বন্ধ থাকবে।পরবর্তীতে হাসপাতাল কতৃপক্ষ নবজাতক শিশুটির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।